মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ - ০৮:০০

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হযরত আব্বাস (আ.) এর চরিত্র, বীরত্ব ও আনুগত্যের মূল ভিত্তি ছিল তাঁর মা বিবি উম্মুল বানীন (আ.) এর অসাধারণ শিক্ষা ও সংযমপূর্ণ লালন-পালন। তিনি তাঁর সন্তানকে কেবল একজন সাধারণ ব্যক্তি হিসেবে নয়, বরং সত্য, ন্যায়, এবং আহলে বায়তের (আ.) প্রতি নিঃস্বার্থ আনুগত্যের মূর্ত প্রতীক হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন।

১. আহলে বায়তের (আ.) প্রতি গভীর ভালোবাসা ও আনুগত্য

বিবি উম্মুল বানীন (আ.) প্রথম থেকেই হযরত আব্বাস (আ.)-এর হৃদয়ে আহলে বায়তের (আ.) প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও আনুগত্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তাঁকে শেখান যে ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হুসাইন (আ.) কেবল তাঁর ভাই নন, বরং তাঁদের আনুগত্য করাই তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় সম্মানের বিষয়।

২. বীরত্ব ও শৌর্যবীর্যের শিক্ষা

তিনি ছোটবেলা থেকেই হযরত আব্বাস (আ.)-কে শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তুলেছিলেন, যাতে তিনি যে কোনো পরিস্থিতিতে সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে সত্যের পথে অবিচল থাকতে পারেন। মা-ই ছিলেন তাঁর মাঝে কৌশল, যুদ্ধবিদ্যা ও আত্মত্যাগের চেতনা জাগিয়ে তোলার প্রধান উৎস।

৩. ধৈর্য ও আত্মত্যাগের শিক্ষা

বিবি উম্মুল বানীন (আ.) কেবল আব্বাস (আ.)-কে ব্যক্তিগত সাফল্যের জন্য গড়ে তোলেননি, বরং তিনি তাঁকে নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে ইসলামের সেবা করার শিক্ষা দিয়েছিলেন। এজন্যই কারবালার প্রান্তরে তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধাবোধ করেননি।

৪. ভক্তি ও শিষ্টাচারের শিক্ষা

হযরত আব্বাস (আ.) কেবল একজন বীরই ছিলেন না, তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ শিষ্টাচারের প্রতীক। তাঁর বিনয়, ধৈর্য এবং ভ্রাতৃত্ববোধ ছিল তাঁর মায়ের শিক্ষা ও স্নেহের ফল।

উপসংহার

হযরত আব্বাস (আ.)-এর গুণাবলি ও কীর্তি তাঁর মা বিবি উম্মুল বানীন (আ.)-এর মহান শিক্ষার প্রতিফলন। আজকের মায়েরা যদি তাঁদের সন্তানদের দ্বীন, আনুগত্য, বীরত্ব ও আত্মত্যাগের শিক্ষায় গড়ে তুলতে চান, তবে তাঁদের জন্য বিবি উম্মুল বানীন (আ.)-এর জীবন সর্বোৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে বিবি উম্মুল বানীন (আ.)-এর শিক্ষা অনুসরণ করার ও আমাদের সন্তানদের সত্য ও ন্যায়ের পথে গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন!

বিবি উম্মুল বানীন (আ.) এর জীবনাদর্শ থেকে আজকের নারীরা অনেক কিছু শিখতে পারেন:

১. সন্তানদের দ্বীন ও বেলায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করুন
শিশুদের আহলে বায়তের প্রতি ভালোবাসা ও তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করতে উদ্বুদ্ধ করুন। পার্থিব সাফল্যের চেয়ে পরকালীন সাফল্যকে অধিক গুরুত্ব দিতে শেখান।

২. শিশুদের আত্মত্যাগ ও পরোপকারের চেতনা গড়ে তুলুন
তাদের শেখান যে সবসময় সত্য ও ন্যায়ের পাশে থাকতে হবে, তা যত কঠিনই হোক না কেন। সন্তানদের আত্মকেন্দ্রিকতার বদলে অন্যের জন্য জীবন উৎসর্গ করার শিক্ষা দিন।

৩. শিষ্টাচার ও শ্রদ্ধাবোধ শেখান
শিশুদের প্রবীণদের, পিতা-মাতা, শিক্ষকদের এবং যুগের ইমামের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা দিন। তাদের ভাষা ও আচরণকে মার্জিত করুন, যাতে তারা প্রকৃত ইসলামের প্রতিনিধি হতে পারে।

৪. ধৈর্য ও দৃঢ়তার শক্তি অর্জন করান
জীবনের পরীক্ষায় কখনো হতাশ হবেন না, বরং বিবি উম্মুল বানীন (আ.) এর মতো লক্ষ্যে অবিচল থাকুন। সন্তানদের সংকটময় সময়ে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা ও ধৈর্য ধারণের শিক্ষা দিন।

বিবি উম্মুল বানীন (আ.) এর শিক্ষার ফলশ্রুতিতে জন্ম নিয়েছিলেন হযরত আব্বাস, যিনি কারবালায় বিশ্বস্ততা, আত্মমর্যাদা, বীরত্ব ও আনুগত্যের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। আজকের নারীরা যদি তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করতে চায়, তবে তাদের উম্মুল বানীন (আ.) এর জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে এবং তাদের সন্তানদের দ্বীন, বেলায়াত, আত্মত্যাগ ও শিষ্টাচারের আলোকে গড়ে তুলতে হবে।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে বিবি উম্মুল বানীন (আ.) এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করার এবং আমাদের সন্তানদের উত্তম শিক্ষায় গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন!

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha